ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বাচ্চা হকার

  • আপলোড তারিখঃ 10-09-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 29923 জন
বাচ্চা হকার ছবির ক্যাপশন: ছবি : সংগৃহীত
ad728

অমিত হাসান >>



মে মাস। বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাসগুলোর একটি। সূর্যের আলো নিভে গিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকার হলো পুরো আকাশ। কিন্তু গরম খুব একটা কমছে বলে মনে হলো না। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। তাই শহরের রাস্তায় গণপরিবহনগুলোতে আর পাঁচটা দিনের মত স্বাভাবিক ভিড়ই দেখা গেল। মাঝেমধ্যেই ভেসে আসছে হকারদের হাঁক-ডাক। ঢাকার রাস্তায় এগুলো খুব স্বাভাবিক, চিরচেনা।


কিন্তু হঠাৎ একটা আওয়াজ কানে আসার পর কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো। সাধারণত হকাররা বাকপটু হয়। বেশ কথা জানা। কথার জাদুতে ভুলিয়ে দেয় যাত্রীদের মন। হয়ত যাত্রীর জিনিসটার প্রয়োজন নেই। কিন্তু হকাররা বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করে যে যাত্রীরা তা কিনতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই হকারটার বেশভূষা  অপরিচিত। অল্প বয়সী একটা ছেলে কেমন যেন ভাঙা, ভাঙা কন্ঠে কথা বলে। ঠিকমতো বলতেও পারছে না। বিক্রি করবে কী? ছেলেটার বয়সও বা কত? ছয়? আট? না,না। আটের বেশি না। বাড়িতে আমার ছোট ভাই আছে। ওর থেকে ছোট এই ছেলে।


'এই পানি, পানি, ঠান্ডা পানি' বলতে বলতে ছেলেটা লোকে লোকারণ্য ট্রেনের এক বগি থেকে অন্য বগিতে এগিয়ে চলল। কিন্তু বাচ্চা হকারটাকে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। হকারই তো! যাদের হয়ত পানি তেষ্টা পেয়েছে ছেলেটার থেকে এক বোতল পানি নিল। কেউ নিল না। কিন্তু এই ছোট ছেলেটাই কেনই বা এই বয়সে পানির বোতল নিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটাছুটি করছে সে খবর কে রাখে?


কোন যে ছোটবেলা সে তাঁর বাবাকে হারিয়েছে জানে না। বন্যায় ভেসে গেছে তাদের বসতবাড়ি। মা অসুস্থ। ছোট বোনটা সবে হাঁটতে শিখেছে। কিন্তু পরিবারের কোনো আয়ের উৎস নেই। কখনো অনাহারে, কখনো অর্ধাহারে থাকতে হয় তাদের। তাই সে একদিন ট্রেনের ছাদে করে ভাগ্যান্বেষনে এসেছে রাজধানী ঢাকায়। তবে ইট পাথরের শহরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে নি এখনো।


যাত্রীদের অনেকর বাড়িতেই হয়ত এ ছেলের বয়সী বাচ্চা আছে। ওরা হয়ত তখন মায়ের কোলে বসে অ,আ, ক, খ দিয়ে নতুন নতুন শব্দ শিখছে। অথবা কষছে কঠিন সব অঙ্ক কিংবা ইংরেজির জটিল সব শব্দ শিখছে। কিন্তু তাদের বয়সী বাচ্চা হকারটা যে এখানে? তাঁর তো সন্ধ্যা হলে টিভিতে কার্টুন দেখার উপায় নেই। চাইলেও সে প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়তে পারে না।


আমাদের সভ্য সমাজের কী মনে হয় সে এগুলো কিছুর ধার ধারে? না। কখনোই না। বরং সে আপন মনে বলে চলছে, 'এই পানি', 'পানি', 'ঠান্ডা পানি'। ছোট একটা মানুষ হয়েও বড় দায়িত্ব তাঁর। কিন্তু আমাদের সভ্য সমাজ তাঁকে অসভ্য প্রমাণেই ব্যস্ত। ট্রেনে হঠাৎ করেই চেচামেচি শুনতে পেলাম। একটু এগিয়ে আসতেই খেয়াল করলাম স্যুট-কোট পরা এক ভদ্রলোক এলোপাতাড়ি কিল- ঘুষি দিচ্ছে বাচ্চা হকারটাকে। হকারটার অপরাধ? ভিড় ঠেলে সামনে যাওয়ার সময় স্যুট-কোট পরা ভদ্রলোকের গাঁয়ে স্পর্শ লেগেছে তাঁর।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ admin

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ